মিডিয়া ব্যবহারে যত্নবান হই
ভালো থাকার অভিযাত্রায় বিভিন্নভাবে আমরা তৈরি হচ্ছি। বেড়ে উঠছি নতুন সমাজ গঠনের ব্রত নিয়ে; যেখানে নিজের প্রতি দায়িত্বসচেতন হয়ে নিজে যেমন ভালো থাকব, তেমনি অন্যদের সচেতন করে হাতে হাত ধরে গড়ে তুলব নতুন পৃথিবী। আমাদের পৃথিবীতে সবাই মিলে ভালো থাকা আমাদের অঙ্গীকার। আর তাই ভালো থাকার পথে যা কিছু বাধা প্রতিনিয়ত সে সম্পর্কে সচেতন হয়ে পরিবর্তনের দায়িত্ব নেব আমরাই। আমরা নতুন পৃথিবীর অগ্রদূত, নতুন বার্তা পৌঁছে দেব দ্বারে দ্বারে।
আমাদের এবারকার শিখন অভিজ্ঞতাটি মিডিয়া-বিষয়ক। তা হতে পারে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম যেমন youtube, facebook, tiktok কিংবা দেয়াল লিখন, লিফলেট, হাটে-বাজারে, নৌকা লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে জিনিসপত্র বিক্রি প্রভৃতি। এসব মিডিয়া বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পক্ষে প্রচারণা চালায় মানুষকে আকৃষ্ট করতে, যাতে মানুষ তাদের পণ্য কেনে। কোনোটা খাবার বা পানীয় নিয়ে, কোনোটা প্রসাধনসামগ্রী, কোনোটা পোশাক কিংবা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীর সঙ্গে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্যাকেজ-সুবিধা নিয়ে। কিন্তু সব সময় আমরা কি এর থেকে সুবিধাই পাই? এই প্রশ্নের উত্তর খুজেঁ বের করাই এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমাদের কাজ। এসব পণ্যদ্রব্য বা বিভিন্ন সুবিধার প্রচারণা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কতটা সহায়ক তা নিয়ে এবার চলবে আমাদের প্রচারণা। সকলের সুস্বাস্থ্য গঠনে অবদান রাখতে আমরা অগ্রদূত হব, মিডিয়া-বিষয়ক সুস্বাস্থ্যের বার্তা আমরাই প্রথম পৌঁছে দেব সবার মাঝে। যা আমাদের মতো এমন করে কেউ করেনি। প্রথমবারের মতো এমন বার্তা সবার মাঝে পৌঁছে দিয়ে আমরা হব সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত।
সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হয়ে এভাবে আমরা অবদান রাখব ভালো থাকায়। গড়ে তুলব আমাদের সুস্থ ও আনন্দময় পৃথিবী। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যের সঠিক তথ্যের উৎস সম্পর্কে জানা এবং যেকোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যা স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত তা যাচাই করার যোগ্যতা অর্জন করা। তাহলে আমরা একটু ভেবে দেখি তো সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হতে এই যোগ্যতা অর্জন করার জন্য কী প্রয়োজন? হ্যাঁ, আমরা প্রথমেই আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যেসব বিজ্ঞাপন, দেয়াল লিখন, লিফলেট, মাইকিং অর্থাৎ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে কী ধরনের প্রচারণা দেখে ও শুনে থাকি, তা খেয়াল করা দরকার। তাছাড়া বুঝব, কী করে এই প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের মেসেজ বা মূল বার্তা খাদ্যাভ্যাস, ফিটনেস, মানসিক স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অর্থাৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে কতটা এবং কীভাবে সংগতিপূর্ণ? আমরা তা খুঁজে দেখব। সেগুলো কীভাবে আমাদের জীবনে ভালো বা মন্দ প্রভাব ফেলছে আমরাই তা বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করব। এরপর আমরা নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র থেকে সঠিক তথ্য জেনে মিডিয়া আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে তা মোকাবিলা করব। শুধু কি নিজেরা ভালো থাকলে আমরা সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হতে পারব? অগ্রদূত হয়ে আমাদের বার্তা পৌঁছাতে হবে। কোথায়, কাদের মাঝে, কীভাবে সে বার্তা পৌছাব তা-ও সবাই মিলে আমরাই ঠিক করব। তবে এটাতো নিশ্চিত সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হয়ে আমরা মিডিয়ার ইতিবাচক প্রচারণাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেব, পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার উপায় সম্পর্কে প্রচারণা চালাব।
সবাই মিলে তো আমরা কয়েকটি প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন নিয়ে আলোচনা করলাম এবং তার প্রভাব বুঝতে চেষ্টা করলাম। এরপর আমরা সবাই যার যার মতো করে একটি কাজ করব। একটি বিজ্ঞাপন খুঁজে বের করব, এই মুহূর্তে যার যে বিজ্ঞাপনটির কথা মনে পড়ছে। এবার মনোযোগ দিয়ে ভাবব এই বিজ্ঞাপনটির কথা কেন মনে পড়ল? এটির মূল কথা বা মেসেজ কী? এটি আমার প্রতিদিনের জীবনে কী প্রভাব ফেলছে? প্রশ্নের উত্তরগুলো ভেবে সংক্ষেপে খাতায় লিখে নেব। সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হতে প্রথম কাজটি কিন্তু আমরা খুব ভালোভাবেই করলাম। যে বিজ্ঞাপনটির কথা হঠাৎ করে মাথায় এলো, তা নিয়েই আমরা কাজ করলাম। আরও কত কত বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা আমরা প্রতিনিয়ত দেখি, কতভাবে যে তা আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে, এভাবে ভেবে দেখাই হয়নি কখনো। কেমন হয় আরও একটু সময় নিয়ে বাড়িতে যদি আরো কয়েকটি বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণ করি এবং নিজের মতো বিশ্লেষণ করি। চলো, এবার আমরা এই কাজটিই করি। আমরা বাড়িতে নিজেদের মতো করে তিনটি প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করব। এই বিজ্ঞাপন ও প্রচারণাগুলো আমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলছে। প্রয়োজনে বাড়িতে অন্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কিন্তু আলোচনা করতে পারি; এতে তাঁরা কী ভাবছেন, তাঁদের জীবনে এগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা-ও বুঝতে পারব। এতে একই বিষয়কে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে দেখার সুযোগ পাব। এরপর আমরা যার যার বিশ্লেষণে ও অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে অপর পৃষ্ঠায় 'আমাদের জীবনে মিডিয়ার প্রভাব' ছকটি পূরণ করব।
আমাদের প্রত্যেকের ছকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কেমন হয় যদি সবার তথ্য সম্পর্কে সবাই যদি জানতে পারি? আমাদের তথ্যভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে তাই না? তাহলে চলো তো দেখি মিডিয়ার বিভিন্ন প্রচারণা, বিজ্ঞাপন কী কী ভাবে প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে সে সম্পর্কে আর কী কী তথ্য সংগ্রহ করেছে সহপাঠীরা। এর জন্য আমরা এবার ছকে প্রাপ্ত বিষয়বস্তু ও প্রভাব নিয়ে দলগতভাবে সবাই মিলে আলোচনা করব এবং সবার আলোচনার ভিত্তিতে প্রাপ্ত মতামতগুলো উপস্থাপনের জন্য সাজিয়ে নেব। এরপর সব দলের উপস্থাপন করার পালা।
শ্রেণির সবার কাছ থেকে মিডিয়ার প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন প্রভাব ও ব্যাখ্যা জানলাম। আমাদের নিজেদের চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে আমাদের নতুন উপলব্ধি হলো কী? চলো এবার আলোচনা ও দলগতভাবে সবার উপস্থাপন শেষে আমাদের যে উপলব্ধি হলো, একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখি। এর মধ্য থেকে নিজেদের কাছে যে প্রভাবগুলো উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে, তা-ও ভেবে বের করি। এরপর নিজেদের উপলব্ধি থেকে যেগুলো উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে, সেখান থেকে শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর দুটি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দুটি এবং সামাজিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর দুটি মিডিয়ার প্রভাব লিখে 'স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মিডিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব' ছক পূরণ করি।
স্বাস্থ্যকর জীবন আচরণ ও মিডিয়ার প্রভাব
আমাদের জীবন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে যাপন করার ক্ষেত্রে মিডিয়ার প্রভাব অপরিসীম। মনে আছে এই তো কিছুদিন আগে যখন করোনার ভয়ে সারা পৃথিবী আতঙ্কিত ছিল? এই বিপদের সময় ভয় নয়, সচেতনতায় জয় এ প্রচারণাটি আমাদের ভীষণভাবে সাহস জুগিয়েছে। করোনা কীভাবে ছড়ায়, আমরা আত্মরক্ষায় কী ব্যবস্থা নিতে পারি-বিভিন্ন মিডিয়া থেকে এ ব্যাপারে অনেক তথ্য জেনেছি আমরা। এমন আরও অনেক প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন আছে যা বিভিন্ন সময়ে মানুষের জীবনে স্বস্তি এনেছে, সাহস জুগিয়েছে, আবার অনেক ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করছে। যেমন এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা পৃথিবীর মানুষ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, এ অবস্থায় আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে করণীয় কী তা-ও কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমেই জানছি। বর্তমানে যে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা, সেগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানি বা পরিবার ও - প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা আমাদের চেয়ে বড় তাঁদের ছোটবেলায় এমন শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারকারী প্রচারণা - ও বিজ্ঞাপন কী ছিল, কী কী মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁরা সেগুলো জানতেন, সেগুলোর গল্প শুনতে পারলে কেমন - হয়? তাহলে আমরা তখনকার মিডিয়া কী ছিল, তার প্রভাব সম্পর্কেও জানতে পারব। তাছাড়া তাদের এই অভিজ্ঞতা থেকে সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করতে আমরা হয়তো একটু অন্যরকম ধারণাও পেয়ে যেতে পারি, যা আমাদের প্রচারণা বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। তাহলে আমরা যে যার পরিবার ও প্রতিবেশী বড়দের কাছ থেকে গল্পগুলো শুনে রাখব এবং পরিকল্পনায় কাজে লাগাব। পাশাপাশি আমরা নিজেরাও বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে এ ধরনের প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন খুঁজে বের করব।
মিডিয়া আমাদের নানা বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকে, যা কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা জীবনকে সাজাতে চেষ্টা করি। তবে সকল তথ্য যে সঠিক বা আমাদের জন্য উপকারী হয় তা নয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করতে দেখা যায়। মনে রাখতে হবে যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অনেকটাই উন্মুক্ত জনসাধারণের জন্য, তাই যে কেউ তাঁর ইচ্ছেমতো যেকোনো সংবাদ বা তথ্য আপলোড করতে পারে। সেখানে এর সত্যতা যাচাই করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে, কোনো একটি জাতীয় প্রচার মাধ্যমে কোনো খবর বা তথ্য প্রচার করতে হলে তাঁর সত্যতা যাচাই করে প্রচার হয়ে থাকে।
প্রায়ই মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করতে দেখা যায়। যখন আমরা বিভ্রান্তিকর তথ্যে প্রভাবিত হই, তখন অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ধ্যান-ধারণা, আচরণ, অভ্যাসের নেতিবাচক পরিবর্তন আসে। এর ফলে সকলের ভালো থাকা তথা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সামর্থ্য না থাকলেও বিচার-বিশ্লেষণ না করে অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্যে আকৃষ্ট হয়ে আমরা বিভিন্ন উপায়ে কিনছি, ব্যবহার করছি। এমন মনোভাব ও আচরণ অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক অবস্থায় চাপ তৈরি করে যা আমাদের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য ব্যাহত করছে। সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হয়ে নিজের ও অন্যের জন্য কাজ করতে এসব বিষয়েও আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
আমরা হয়তো কমিউনিটি হেলথ বা সামাজিক স্বাস্থ্য শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। এর মাধ্যমে আমাদের সমাজের সকলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার, সকলের জন্য একসঙ্গে রোগ প্রতিরোধ করার সুযোগ এবং সমাজে স্বাস্থ্য বৈষম্য দূর করার সুযোগ তৈরি হয়। সমাজে বসবাসরত সকলের আচরণ, অর্থনৈতিক সাম্য এবং পরিবেশ, সামাজিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রেও মিডিয়া বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। মিডিয়ায় প্রায়ই অনেক ভুল তথ্যও প্রদান করতে দেখা যায়। এসব তথ্যকে বিশ্বাস করে আমরা আমাদের জীবন সাজানোর চিন্তাভাবনাগুলো ভুল পথে পরিচালনা করে থাকি। এই ভুলগুলো সবার মাঝে তুলে ধরাও সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত হিসেবে আমাদের কাজ। আমরা তো অনেকটাই বুঝতে পারছি মিডিয়া আমাদের জীবনে ভালো ও খারাপ দুভাবেই কী করে প্রভাব ফেলছে; তাই না?
তাহলে এখন আমাদের কাজ কী? কী করতে চাই আমরা এখন? আমরা সুস্বাস্থ্যের অগ্রদূত, সুতরাং মিডিয়ার ভালো প্রভাবগুলো, প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা ও তথ্য যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন। তার মধ্য থেকে কিছু বেছে নিই যা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে চাই। সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন করা তো আর আমাদের পক্ষে একবারে সম্ভব নয়, তাহলে সবাই মিলে কয়েকটি বিষয় ঠিক করে নিলে কেমন হয়?
তাহলে চলো শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে নিই কী উপায়ে আমরা বাছাই করব- কোন কোন বিষয়ের প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা ও তথ্য নিয়ে আমরা অন্যদের সচেতন করতে চাই। এরপর দলে ভাগ হয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে কাজ করতে চাই তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নিই। তবে আমাদের মনে আছে তো স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে আমাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। আর শুধু অন্যদের প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন ব্যবহার করলে কি আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার অগ্রদূত হতে পারব? এর জন্য আমাদের চাই নিজস্ব বার্তা, ব্যাখ্যার প্রক্রিয়া, যাতে আমরা যাদের সচেতন করতে চাই, তাদের চমৎকারভাবে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হই। আমরা কিন্তু ঐ প্রচারণা বা বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা ও তথ্য নিয়ে নিজেরা বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারি; যা হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অগ্রদূত হিসেবে আরও উদ্ভাবনীমূলক। আলোচনার বিষয় হতে পারে- যে বিষয় নিয়ে আমাদের প্রচারণার কাজ করতে চাই, মূল কী তথ্য নিয়ে প্রচার করতে চাই, তথ্য সূত্র, কোথায় বা কাদের সচেতন করতে চাই, কীভাবে করব, সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা ইত্যাদি। অন্য কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন মনে হলে তা-ও আলোচনা করে ঠিক করে নিই। এরপর আমাদের পরিকল্পনাগুলো অপর পৃষ্ঠায় 'সচেতনতায় আমার দলের কাজ' ছকে লিখি।
সচেতনতায় আমার দলের কাজ
|
যে প্রচারণাগুলো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে আমাদের প্রচারণা দিয়ে কীভাবে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি তার পরিকল্পনা তো করলাম। কিন্তু এখানেই তো শেষ নয়; যেগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেগুলো নিয়েও আমরা কাজ করতে চাই। অনেক বিষয়ই তো আছে যার খারাপ প্রভাব আমাদের সুস্বাস্থ্যকে ব্যাহত করে। এবার তাহলে সবাই মিলে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি প্রচলিত কোন ধরনের প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনে আমরা আকৃষ্ট হই, যেগুলো আমাদের সুস্বাস্থ্য চর্চায় খারাপ প্রভাব ফেলে। আর এর জন্য নিজেদের দিয়ে শুরু করলে কেমন হয়? হ্যাঁ পরিবর্তন সব সময় নিজেদের দিয়েই শুরু করতে হয় তাই না?
তাহলে শুরু হোক নিজেকে দিয়ে। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কোনো প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে নেতিবাচক এমন কিছু করছি কি না, যা আমার সুস্বাস্থ্যকে ব্যাহত করছে? হতে পারে কোমল পানীয় বা জাঙ্কফুড খাচ্ছি, রাত জেগে জেগে ফোন বা সামাজিক মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকছি, কোনো প্রসাধনসামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেখে মন ছোট হয়ে যাচ্ছে বা হতাশাবোধ করছি; কিংবা কাউকে ছোট করে কথা বলছি বা তামাশা করছি, ফেসবুকের মাধ্যমে সাইবার বুলিং বা অনলাইনে অপমান-হয়রানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছি।
এরপর ভেবে দেখি তো আমাদের আশেপাশে কী এমন হতে দেখছি? এমন কী কী দেখতে বা শুনতে পাই, নিজের খাতায় লিখে নিই। নিজের মতো করে লিখে নিয়ে সবাই মিলে বুঝতে পারব কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।